আজ রবিবার, ২রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

না.গঞ্জে নারী সাংবাদিকতা

নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের বিভিন্ন পেশার মধ্যে চ্যালেঞ্জিং একটি পেশার নাম সাংবাদিকতা। যা ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। সাংবাদিকতা নারী-পুরুষ উভয়ের পেশা হলেও পুরুষের তুলনায় নারীদের অংশগ্রহণ বেশ কম। এর মাঝেই নারায়ণগঞ্জে সাংবাদিকতায় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন বেশ কিছু নারী সাংবাদিক। পারিবারিক ও সামাজিক বিভিন্ন বাঁধা বিপত্তি উপেক্ষা করে নিজেদের দাঁড় করিয়েছেন গ্রহণযোগ্য স্থানে। নারী দিবসে নারায়ণগঞ্জের এমনই কিছু নারী সাংবাদিক নিজেদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন দৈনিক সংবাদচর্চাকে।
মাত্র ৪/৫ বছর পূর্বেও নারায়ণগঞ্জে নারী সাংবাদিকের সংখ্যা ছিল ১/২ জন। ধীরে ধীরে তা ছড়িয়েছে পুরো জেলায়। প্রথম দিকে অসংখ্য পুরুষ সাংবাদিকদের মাঝে নিজেকে মেলে ধরতে সংকোচবোধ করলেও সময়ের সাথে তা মানিয়ে নিয়েছেন সহজেই। পরিবারের অমতে যেখানে সাংবাদিকদের সহায়তা প্রয়োজন ছিল সেখানে অনেকক্ষেত্রে পুরুষ সাংবাদিকদের কাছেই কটুক্তি ও অসহযোগিতা পেতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন নারী সাংবাদিকরা। তবে ধীরে ধীরে তরুণদের হাতে পরিবর্তন চলে আসায় সেখান থেকে অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে জেলাজুড়ে।
দৈনিক সংবাদ এর সাংবাদিক আফরিন আহমেদ হিয়া বলেন, সাংবাদিকতা হচ্ছে এমন একটি পেশা যেখানে মানুষের অনুভূতি জানা যায় এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের সাথে সহজেই সংযুক্ত হওয়া যায়। নতুন নতুন বিষয় তুলে আনা সহ বিভিন্ন দিক হিসেব করলে সাংবাদিকতা অনেকটাই উপভোগ্য। তবে নারায়ণগঞ্জ সহ সারাদেশে নারীদের সাংবাদিকতা এখনও ততটা সাবলীল না হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত সাংবাদিকতার উপভোগের বিষয়টি কিছুটা হলেও কমতি রয়েছে আমাদের মাঝে। বিশেষ করে বিভিন্ন সংবাদ সংগ্রহকালে নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের বার বার ভাবতে হয় এবং বিভিন্ন দিক চিন্তা করে আমাদের পদক্ষেপ নিতে হয়। ছেলেরা যেভাবে চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিতে দিতে সাংবাদিকতা করতে পারে সেখানে আমরা সেভাবে পারিনা। তবে আগের তুলনায় বর্তমানে নারায়ণগঞ্জে নারীদের জন্য সাংবাদিকতার পথ তুলনামূলক সহজ হয়েছে। তবে চ্যালেঞ্জিং আগেও ছিল, বর্তমানেও রয়েছে।
ঢাকা ট্রিবিউনে কর্মরত সাংবাদিক শামীমা রীতা বলেন, আমি দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করলেও এটা এখনও শখ ও ভালোবাসা পেশা হিসেবেই দেখি। আক্ষরিক অর্থে পেশা বলতে যেটা বুঝি সেটা এখনও মনে করিনা। নিজেকে এখনও শিক্ষানবিস হিসেবে ভাবি। তবে এই পেশায় আসাটা এতটা সহজ ছিল না। পরিবার থেকে শুরু করে পাড়া প্রতিবেশীদের মন্তব্য শুনতে হয়েছে। তাছাড়া রিপোর্টিং এর সময় পুরুষ সাংবাদিকদের কাছে টিজ হতে হয়েছে। তারা প্রথমে মেয়ে হিসেবে নাক সিটকাতো। আমরা সেই স্থান থেকে ধীরে ধীরে নিজেদের সামনে নিয়ে আসতে পেরেছি বলে মনে করি। পেশাটা বর্তমানেও নারীদের জন্য আরও বেশী চ্যালেঞ্জিং, তবে ধীরে ধীরে পরিবর্তনটাও আসছে।
দৈনিক যুগের চিন্তায় কর্মরত সাংবাদিক নুসরাত জাহান সুপ্তি বলেন, নারায়ণগঞ্জে সাংবাদিকতা নারীদের জন্য উপভোগ্য অবশ্যই তবে তার পূর্বে নিজেকে বেশ কিছু বিষয় মানিয়ে নিতে হয়। আশেপাশের পরিবেশ দেখে সেখানে কাজ করতে হয়। বেশ কয়েকটি সেক্টর রয়েছে যেখানে নারীদের জন্য চ্যালেঞ্জটা বেড়ে যায়। আবার কোথাও কোথাও নারীদের জন্য সহজও হয়। তবে যারা অনুসন্ধানী রিপোর্টে নিজেদের নিয়োজিত রাখে তাদের জন্য সাংবাদিকতা চ্যালেঞ্জিং এর পাশাপাশি উপভোগ্যও বটে। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পূর্বে পরিবারের কিছুটা বাঁধা থাকলেও সেটা বর্তমানে আমি মানিয়ে নিতে পেরেছি। পরিবারের বাইরে সংবাদ সংগ্রহকালে কিছুটা নেতিবাচক মন্তব্য শুনতে হয়েছে। সেসবের দিকে একেবারেই কান দেইনি। নিজেকে আলাদা ভাবে গড়ে তুলে নিজ কাজে এগিয়ে গিয়েছি। আর এটাই সামনে যারা নারী সাংবাদিক হিসেবে আসবে তাদের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ বলে আমি মনে করি।
প্রেস নারায়ণগঞ্জে কর্মরত সাংবাদিক আফসানা আক্তার বলেন, সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হয়ে বেশ ভালোই লাগে। কারন এটি একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা হওয়ায় চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করাটা আমার কাছে বেশ আকর্ষনীয়। তবে এ পেশায় প্রবেশের পূর্বেই পারিবারিক ও সামাজিক কিছু বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন মেয়েদের দৌড়ঝাঁপ অনেকেই পছন্দ করে না। সংবাদ সংগ্রহকালে অনেকসময় সহযোগিতা পর্যাপ্ত পাওয়া যায় না। তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের বক্তব্য সংগ্রহকালে বেশ সহযোগীতা পাওয়া যায়। কারন তারা পুরুষদের চাইতে নারী সাংবাদিকদের বেশী বিশ্বাস করে। তবে মাঠ পর্যায়ে কাজের ক্ষেত্রে পুরুষ সাংবাদিকরা যদি একটু আমাদের সহায়তা করে তবে তা আমাদের জন্য কর্মপরিবেশ আরেকটু সহজ হয়ে উঠতো।
জেলার সিনিয়র সাংবাদিকদের মতে, নারায়ণগঞ্জ সহ সারাদেশে নারীরা যেভাবে এগিয়ে আসছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। নারীরা ঘরের ভেতর সীমাবদ্ধ না থেকে সংবাদ সংগ্রহের মত ঝুকিপূর্ন পেশায় আসছেন এবং তাতে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছেন যা অনেক পুরুষ সাংবাদিকও সাহস করেন না। ফলে বোঝাই যাচ্ছে নারী পুরুষের উর্দ্ধে সাংবাদিকতায় জেলা জুড়ে অনন্য একটি অবস্থানে উঠছে।